স্ক্যাবিস রোগ
স্ক্যাবিস রোগ একটি ছোঁয়াচে ত্বকের সমস্যা, যা Sarcoptes scabiei নামক ক্ষুদ্র মাইটের কারণে হয়। এই মাইট ত্বকের নিচে গর্ত করে ডিম পাড়ে, ফলে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, যা জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। এই ব্লগে আমরা জানবো স্ক্যাবিস কী এবং এর লক্ষণ এবং এই রোগ থেকে আপনি কিভাবে সচেতন হতে পারেন। Follow Our Facebook Page: Grow Health BD
What is scabies-স্ক্যাবিস কী?
সংজ্ঞা ও কারণ
স্ক্যাবিস একটি পরজীবী সংক্রমণ, যা Sarcoptes scabiei নামক মাইটের কারণে হয়। এই মাইট ত্বকের উপরিভাগে গর্ত করে ডিম পাড়ে, যা থেকে লার্ভা বের হয়ে ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া দেখায়, ফলে চুলকানি ও ফুসকুড়ি হয়।
কিভাবে ত্বকে প্রবেশ করে?
মাইট ত্বকের উপরিভাগে গর্ত করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে লার্ভা বের হয়ে ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন গর্ত তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় ত্বকে চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
স্ক্যাবিসের লক্ষণ ও উপসর্গ
প্রাথমিক লক্ষণ
- তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতে
- লাল ফুসকুড়ি বা ছোট গর্ত
- ত্বকের ভাঁজে ফুসকুড়ি
অগ্রসর অবস্থার লক্ষণ
- চুলকানির ফলে ত্বকে ক্ষত
- দ্বিতীয় সংক্রমণ
- ত্বকে ঘন ফুসকুড়ি
শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভিন্নতা
শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা, মুখ, হাত ও পায়ের তালুতে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ত্বকের পাতলা অংশে ফুসকুড়ি হতে পারে। Join Our Facebook Group: Grow Health BD
স্ক্যাবিস কিভাবে ছড়ায়?
শারীরিক সংস্পর্শ
স্ক্যাবিস মূলত দীর্ঘ সময়ের সরাসরি ত্বক-ত্বক সংস্পর্শে ছড়ায়, যেমন: যৌন সম্পর্ক, ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন।
কাপড়, বিছানা, তোয়ালে ব্যবহারের মাধ্যমে
স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, বিছানা বা তোয়ালে ব্যবহার করলে সংক্রমণ হতে পারে।
ছোঁয়াচে হওয়ার সময়কাল
প্রথমবার সংক্রমিত হলে লক্ষণ দেখা দিতে ৪-৬ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে, তবে এই সময়েও রোগ ছড়াতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি কারা?
শিশু, গৃহকর্মী, ঘন বসবাসকারী পরিবার
শিশু, গৃহকর্মী ও ঘন বসবাসকারী পরিবারে স্ক্যাবিস ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি।
হোস্টেল, নার্সিং হোম, হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার
হোস্টেল, নার্সিং হোম এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, কারণ সেখানে ঘন জনসমাগম থেকে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
প্রাথমিক চিকিৎসা
- Permethrin 5% ক্রিম: ই ক্রিম সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করে স্ক্যাবিসের জীবাণুকে ধ্বংসে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- Ivermectin ট্যাবলেট: এই মুখে খাওয়ার ওষুধ শরীরের ভিতরে থাকা চুলকানির যেই পরজীবী (মাইট) সেটাকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে, তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
ঘরোয়া সহায়ক উপায়
- নিমপাতা: প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে কার্যকর।
- হলুদ: প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আরো পড়ুন: কানে ফাইলেরিয়া সংক্রমণ কারণ লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
চিকিৎসার সময় সতর্কতা
- পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা করা উচিত।
- ব্যবহৃত কাপড় ও বিছানা গরম পানিতে ধুয়ে শুকাতে হবে।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায়
ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
এই ধরণের ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচতে- নিয়মিত গোসল, পরিষ্কার কাপড় পরিধান ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আলাদা রাখা উচিত।
পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা
স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা করা উচিত কারন যেহেতু এটি ছোঁয়াচে তাই সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে একসাথে চিকিৎসা নেওয়া কার্যকর।
ঘর, বিছানা, কাপড় জীবাণুমুক্ত রাখা
ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধের জন্য ঘর, বিছানা ও কাপড় নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা খুবই জরুরী।
ভুল ধারণা ও সচেতনতা
স্ক্যাবিস মানেই অপরিষ্কার — এই ধারণা ভুল
অপরিষ্কার হওয়ার কারনের বা স্ক্যাবিস পরিচ্ছন্নতার অভাবে নয়, বরং সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে হতে পারে।
পুনরায় হওয়া রুখতে করণীয়
পুনরায় স্ক্যাবিস রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা নিতে হবে এবং দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুল জীবাণুমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরী।
সময়মতো চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে?
এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে ত্বকে ক্ষত, সংক্রমণ ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। আরো পড়ুন: দ্রুত ওজন কমানোর ১০টি বিজ্ঞানসম্মত উপায়
উপসংহার
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করেছি স্ক্যাবিস কী এবং এর লক্ষণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে, আর এই স্ক্যাবিস রোগ প্রতিরোধযোগ্য। সামাজিক সচেতনতা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন(০১): স্ক্যাবিস কি ভাইরাস?
উত্তর: না, স্ক্যাবিস একটি পরজীবী মাইটের [মাইট (Mite) হলো অতি ক্ষুদ্র একধরনের পরজীবী বা আর্থ্রোপড, যা সাধারণত চোখে দেখা যায় না] কারণে হয়।
প্রশ্ন(০২): এটা কি নিজে নিজে ভালো হয়ে যায়?
উত্তর: না, সাধারণত চিকিৎসা ছাড়া স্ক্যাবিস ভালো হয় না।
প্রশ্ন(০৩): স্ক্যাবিস হলে গোসল করা যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
প্রশ্ন(০৪): বাচ্চাদের স্ক্যাবিস হলে কী করব?
উত্তর: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন(০৫): স্ক্যাবিস কি ছোঁয়াচে?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি সরাসরি ত্বক-ত্বক সংস্পর্শে ছড়ায়।
প্রশ্ন(০৬): স্ক্যাবিসের চিকিৎসা কতদিন লাগে?
উত্তর: চিকিৎসা শুরু করার পর সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গ কমে যায়।
পরিবারে কেউ স্ক্যাবিসে ভুগলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরামর্শ পেতে Grow Health BD-এর সঙ্গেই থাকুন!
আরো পড়ুন: ডিটক্স কি এবং কেনো জরুরি?
Check out Jannaty Akter’s 👉(Portfolio) for high-quality Graphic Design and Digital Marketing solutions.